Type Here to Get Search Results !

#Advertisement

গুরু নানকের উপদেশাবলী


 গুরু নানক


গুরু নানক ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর হইতে প্রায় ৩০মাইল দূরে তালওয়ান্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৫৩৮খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তিনি শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। একদা তিনি ঐশ্বরিক নির্দেশ পাইলেন শহরে শহরে গিয়া নর-নারীর অন্তরের ব্যাধি দূর করিতে হইবে।
 তিনি উপলব্ধি করলেন যে, নিজের বলিয়া কোন জিনিস তাহার নাই। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার হইল নিজের সম্পদ অপরকে বিলাইয়া দেওয়া। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিকট পরম পিতার এই মহান বাণী পৌছাইয়া দিতে তিনি প্রস্তুত হইলেন। তিনি বলিতেন, "হিন্দু বা মুসলমান বলিয়া ভিন্ন কোনো সত্তা নাই। সকল ধর্মের সারতত্ত্ব ভগবানের প্রতি আত্মসমর্পণ"।

ধর্ম প্রচারের সময় তিনি মরদানা নামক একজন মুসলমান সঙ্গীতজ্ঞ কে   সঙ্গে নিয়েছিলেন এবং হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মিলিত পোশাক পরতেন। সংগীতের মাধ্যমে তিনি প্রচার করিলেন," আমি মানুষকে পথ দেখাইতে আসিয়াছি, আমি একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কাউকে জানিনা, জাতিভেদ মানি না"।

ভারতের কয়েকটি তীর্থস্থান ছাড়া মক্কা, মদিনা, বাগদাদ, জেরুজালেম,  দামেস্কো প্রভৃতি  স্থানে  তিনি ধর্ম প্রচার করেন। কলম্বোয় সিংহলের রাজা শিবনভ তাকে প্রশ্ন করেন, "আপনি কি প্রাচীন যোগী অথবা সন্ন্যাসীর প্রবর্তিত নীতি অনুসরণ করেন? "

উত্তরে তিনি একটি গান করেন। সেই গানের মর্মার্থ হইল, " হে প্রভু, যখন তুমি আমাকে ডাক দাও, তখন তোমার সঙ্গে আমি মিলিত হই…। তোমার নামে যাহার অবস্থান সে সবকিছুর উপরে তোমার সেবার মাঝেই জাগিয়া থাকে"। রাজা সে গান শুনিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন।

মক্কার সুপ্রসিদ্ধ কাবা মসজিদ এর নিকট ঈশ্বরের সার্বজনীনতা প্রচার করিয়া তিনি এক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। একদিন রাত্রে তিনি কাবা মসজিদের দিকে পা রাখিয়া ঘুমাইতেছিলেন। এমন সময় একজন তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, " ঈশ্বরের দিকে পা রাখিয়া ঘুমাইতেছ কেন? "গুরু নানক উত্তর দিলেন, যেদিকে  আল্লাহ নাই সেদিকে আমার পা ঘুরাইয়া দাও.. আল্লাহ যে সর্বত্র বিরাজমান"।

তাহার ধর্মমত ছিল অতি সরল। জাত্যভিমান পরিত্যাগ করিয়া সকলের সঙ্গে মিলিত হইয়া শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভগবানের কীর্তনই এই উপাসনার প্রধান অঙ্গ।

গুরু নানকের প্রধান গুণ ছিল তাহার অন্তর। ধর্মবিশ্বাস মানুষের লুপ্ত হয় তখন, যখন জীবন থেকে ধর্ম প্রীতম হইয়া পড়ে। আর ধর্ম মানুষের নিজস্ব সম্পদ হইবে তখন যখন মানুষ সবার সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে থাকিতে শিখিবে। গুরু নানক মানুষকে মানব ভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দেন। দরিদ্রের ও অধঃপতিতয়ের সেবাকে তিনি ধর্মের উচ্চস্থান দেন। তাহার মতে, ঈশ্বরের প্রেমের চিন্তায় মগ্ন হইবে শিষ্যরা, ধ্যানী জব ও মন্ত্র।

আট প্রকার অভ্যাস বা সাধনাই মন্ত্র

১। দেহ ও পবিত্রতা
২। নিস্তব্ধতা
৩। মনঃসংযোগ
৪। মন্ত্রের আত্মোপলব্ধি
৫। ধৈর্য ও সন্তোষ
৬। বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা।
৭। সৎসঙ্গ
৮।দৈনন্দিন জীবনে মন্ত্রের সাধনা।

গুরু নানকের বিভিন্ন সংগীত ও বাণী গুলি পাঁচটি গ্রন্থে সংকলিত করা হইয়াছে।

1। জপজী
২। পাট্টি
৩। অরাঠি
৪। দক্ষিণীয় ওঙ্কার এবং
৫। সিংহ গোষ্ঠী

ধর্মবিশ্বাস ও বিজ্ঞান পরস্পর সামঞ্জস্যের মাঝে মিলিত হয়েছে সেই অনন্তের জ্ঞানে। শিখদের ধর্মগ্রন্থ,
 "গ্রন্থ সাহেব" নামে অভিহিত। এই গ্রন্থে ধর্মগুরুদের উপদেশাবলী সংকলিত আছে। অমৃতসরে অতি পবিত্রতার সাথে তাহা রক্ষিত আছে।

কৃষকদের প্রতি নানকের উক্তি....

তোমার দেহ হোক ক্ষেত । সু কাজের বীজ বপন করো সেই ক্ষেতে। ঈশ্বরের নামের দ্বারা সেই ক্ষেতে জল সিঞ্চন কর  এবং তোমার অন্তর কর্ষণ। তাহা হইলে ঈশ্বর তোমার অন্তরে অঙ্করিত হইবে! তোমার মুক্তিলাভ ঘটিবে।

ব্যবসায়ীর প্রতি গুরু নানকের উক্তি

জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই জ্ঞানী হইবে তোমার দোকান। ঈশ্বরের কথা হোক মূলধন। প্রার্থনা ও ধ্যান হোক পাত্র এবং সেই পাত্র ঈশ্বরের কথায় পূর্ণ করো।

সৈনিকের প্রতি তার উক্তি

সততা হোক তোমার অশ্ব, এবং সংযমের পোশাকে ভূষিত হইয়া সত্যের তলোয়ার ও ঢালনিয়া জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হও তুমি।

গৃহস্থের প্রতি গুরু নানকের উক্তি

তোমার অন্তরে রহিয়াছে ঈশ্বর, তাহাকে অন্যত্র খুজতেছো কেন? সবার উপরে সত্যের স্থান। কিন্তু সত্য জীবন আরও উপরে। সকলের মাঝে সেই পরম পিতা কে যিনি দেখিতে পান তিনি প্রকৃত ধার্মিক। পার্থিব সকল প্রলোভনের মাঝে থাকিয়াও তিনি শুদ্ধ চিত্র এবং তিনি ধর্মের অন্তর্নিহিত তত্ত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম।

গুরু নানকের ভাষায় বলতে হয়
"বাঝু সচ্চা নমে দে-হোর কারামাত অসাথে নাহি"। অর্থ্যৎ এক সৎনাম ভিন্ন অন্যকোন কারামতি আমার কাছে নাই।

 
Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area