শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ হুগলি জেলার অন্তর্গত আরামবাগ মহকুমার কামারপুকুর গ্রামে ১২৪২ সালে (১৮৩৬ খৃষ্টাব্দে) ৬ই ফাল্গুন জন্মগ্রহণ করেন, এবং ১২৯৩ সালে (১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে) খ্রিস্টাব্দে তিনি মহাসমাধি লাভ করেন।
তিনি বেশি বিদ্যা অর্জন করেন নাই। তথাকথিত লেখাপড়ায় তাহার মন ছিল না। কিন্তু চারুকলা, সংগীত, অভিনয় ও মূর্তি নির্মাণে তাহার ঝোঁক ছিল। এদিকে যেমন অদ্ভুত স্মৃতিশক্তি ছিল, তাহার তেমনি অদ্ভুত ছিল তাহার অনুকরণ করার ক্ষমতা। রামকৃষ্ণদেব নিজে মূর্তি গড়িয়া তাহা পূজা করিতেন । তাহার পূজা দেখিবার মত ছিল। তিনি যখন পূজা করিতেন, তখন তিনি মনে করতেন যে জগৎজননী স্বয়ং তাহার সামনে আছেন। তিনি পুজার শেষে মাকে দেখিবার জন্য কাঁদিতেন। মায়ের দর্শন না পাইয়া তিনি একদিন খড়গ নিয়া সত্য সত্যই আত্মহত্যা করবেন ঠিক করলেন। এই সময় মা আসিয়া তাহার সামনে দাঁড়াইলেন আর অমনি তিনি মূচ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেলেন। তিনি হিন্দু ধর্ম ছাড়া ইসলাম ধর্ম খ্রিস্টান ধর্ম নিয়েও সাধনা করেন এবং এইসব সাধনায় সিদ্ধিলাভও করেন।
রামকৃষ্ণদেবের উপদেশাবলি
১। ছেলেবেলা থেকেই কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ। এটি খুব আশ্চর্য্য, খুব কম লোকের পক্ষে সম্ভব।
২। বালকের ন্যায় বিশ্বাস দেখিলে ঈশ্বরের দয়া হয়, সংসার বুদ্ধিতে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না।
৩। বিবেক বরাগ্যের সাথে পুস্তক না পড়িলে, পুস্তক পাঠে দাম্ভিকতা অহংকার বাড়িয়া যায় মাত্র।
৪। পুথিতে অনেক ধর্ম কথা লেখা আছে, শুধু পড়িলে হয়না, সাধনা চাই।
৫। ঈশ্বরকে দেখা যায় আবার তাহার সঙ্গে কথা কওয়া যায়, যেমন আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতেছি।
৬। তিনি সকলের ভিতরে আছেন, যে খোঁজে সে তাকে পাই।
৭। ছাদের উপর উঠিতে হইলে মই, বাঁশ, সিঁড়ি ইত্যাদির সাহায্যে যেমন উঠা যায়, তেমনি এক ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার অনেক পন্থা আছে। প্রত্যেক ধর্মই এক একটি পন্থা।
৮। চিত্তশুদ্ধি না হইলে ভগবান দর্শন হয় না। কাম, ক্রোধ, লোভ এসব জয় করিলে তবে তাহার কৃপা পাওয়া যায় তখন দর্শন হয়।
৯। যে সর্বদা পাপ করে সে পাপী হয়ে যায়।
১০। ভক্তের জাতি নাই। ভক্ত হইলেই দেহ,মন, আত্মা সব শুদ্ধ হয়। ভক্তি না থাকলে ব্রাহ্মণ--ব্রাহ্মণ নয়। ভক্তি না থাকলে চন্ডাল--চন্ডাল নয়। অস্পর্শ জাতির ভক্তি থাকিলে শুদ্ধ পবিত্র হয়।
১১। ঈশ্বর শুদ্ধ মনের গোচার।
১২। ব্রাহ্মা ও শক্তি ও অভেদ।
১৩। ব্রাহ্মা যে কি, মুখে বলা যায় না।
১৪। দুই রকম "আমি" আছে একটা পাকা "আমি" আরেকটা কাঁচা "আমি"। আমার বাড়ি, আমার ঘর, আমার ছেলে এইগুলি কাচা "আমি" আর পাকা "আমি" হইতেছে, "আমি" তাহার দাস "আমি" তার সন্তান "আমি" সেই নিত্য মুক্ত জ্ঞান স্বরূপ।
১৫। আমার আমিত্ব দূর হইলে ভগবান দেখা দেন।