পারস্য দেশের মজদীয় ধর্মের প্রবর্তক সরথুস্ত্র। তিনি খ্রিস্টের জন্মের ৮০০বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং ৭৭বছর জীবিত ছিলেন। তার ধর্মগ্রন্থের নাম ''জেন্দাবেস্তা" এই গ্রন্থে বহু মূল্যবান উপদেশ রহিয়াছে। বিশেষত সৎচিন্তা, সৎবাক্য ও সৎ কর্মের উপর আলোকপাত করা হইয়াছে। ক্রোধ ও প্রতিহিংসা দ্বারা আত্মার সৌন্দয্য নষ্ট করা অনুচিত। পরের দুঃখ দূরীকরণ দ্বারাই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়।
পরের দুঃখ দূরকারী ব্যক্তিই জগতপিতার প্রকৃত উপাসক। আত্ম-প্রশংসা সর্বদা বর্জনীয়। আমরা অন্যের নিকট হইতে যে ব্যবহারে খুশি হই, অন্যের প্রতি ও আমাদের সেইরূপ ব্যবহার করা বিধেয়। স্ত্রী পুত্র-কন্যা ও প্রতিবেশীদের প্রত্যেককে সুশিক্ষাদান করা অবশ্য কর্তব্য। জগতপিতার কাছে সর্বদা সৎপথে চলার জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত।
ধনী-দরিদ্র ছোট-বড় সকলের প্রতি আমাদের কর্তব্য সমভাবে পালন করা উচিত। এজাতীয় মহৎ বাণী উক্ত গ্রন্থ আরো আছে।পার্সিকেরা অগ্নির মাধ্যমে জগতপিতার পুজা করেন, তাই বলিয়া প্রকৃতপক্ষে তারা অগ্নি উপাসক নহে। অগ্নি তাহাদের উপাসনার একটি মাধ্যম মাত্র। পারসিক সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি একটি মহাপাপ। তাদের ধর্মে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন।
তাহা (বিবাহ) চারিত্রিক সুচিতা সংরক্ষণের একটি শ্রেষ্ঠ উপায়।কিন্তু তাই বলিয়া আবার বহু বিবাহ নিষিদ্ধ ,মৃত্যুর পরেও তারা আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। মহাত্না সরথুস্ত্রের সুদূর অতীতের এই সুন্দর বিধানগুলি প্রশংসার্হ। পরবর্তী যুগে বহু ধর্মগুরু অধিক ক্ষেত্রে তাহারি পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়াছেন। চারিত্রিক শুচিতা, পরদুঃখকাতরতা, আত্মনির্ভরশীলতা, ধনী-দরিদ্র্যের বিভেদ মোচন, একেশ্বরবাদ, নারীর মর্যাদা, সৎচিন্তা, সৎবাক্য, সৎকর্ম প্রভৃতি ধর্মের মর্মবাণীগুলি তাহার কাছেই প্রথম গুরুত্ব লাভ করে। পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভের প্রায় সকল উপাদানই এই পবিত্র গ্রন্থে রহিয়াছে।
কবি হাফিজ সরথুস্ত্র ধর্ম সম্বন্ধে একটি সুন্দর উক্তি করিয়াছেন:--
" ব-বাগা তাঙা কুঁন-ই-দীন এ সরথুস্ত্র। কাউকে লালা বর আফরোখত আতশ-ই-নিমরোজ"
অর্থ:- ফুল বাগানের ফুলের মত, এই সরথুস্ত্র ধর্মকে তোমরা বাচাইয়া রাখ, এই ধর্মের রীতিনীতি এমন যে দুপুরের রোদে শুষ্ক হয় না। এই ধর্মের লালা ফুলের আভা, ঝড়-ঝঞ্ঝার তীব্র বিরোধিতার মধ্যেও লোপ পায়না।
হিন্দু ধর্মের উপদেশ বাণী
হে ঈশ্বর, আমাকে নিয়ে চলো অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোকে, মৃত্যু থেকে আমৃত্য। এই অনিতা মৃত্যুময় জগৎ থেকে আমাকে শাশ্বত আনন্দের জগতে নিয়ে চলো। তোমার করুণার দীপ্তিতে আমার অন্তরআত্না সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক। আমাকে জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে উদ্ধার করো এবং র্পর্ণজম্মের মূল যে কামনা বাসনা, তার বিনাশ ঘটাও।
রামচনন্দের কয়েকটি বাণী:-
(১) আমি পিতার আদেশ পালন করিব, কারণ তিনি প্রত্যক্ষ দবেতা।
(২)সত্য পালনই শ্রেষ্ট ধর্ম্ম।
(৩)ধর্ম্মচারিণী স্ত্রী দ্বারাই বংশের গৌরব বৃদ্ধি পায়।
(৪)বন্ধু কিংবা সুহৃদবের্গের বিনাশ দ্বারা যে দ্রব্য লদ্ধ হয় তাহা বিষাক্ত খাদ্যের ন্যায় পরিহার্য্য।
শ্রী কৃষ্ণ হিন্দুধর্মের অপর একজন প্রেমিক-পুরুষ ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ট বাণী হইতেচেছে--ভগবানের চরণে সমস্থ কিছু সমর্পন করিয়া তুমি নিষ্কাম হইয়া কর্ত্তব্য সম্পাদন করিয়া যাও।
শ্রীকৃষ্ণের গীতা সকল মানুষের নিকট শ্রদ্ধার বস্তু। মানবের শিক্ষনীয় বিষয়ে গীতার কয়েকটি শ্লোক নিন্মে দেওয়া হইলঃ
ইন্দ্রিয়াণী পরাণ্যাহুরিন্দ্রিয়েভ্যঃ পরং মনঃ।
মনস্ত পরা বুদ্ধির্যো বুদ্ধেঃ পরতস্ত সঃ।
অর্থঃ দোহাদি বিষয় অপেক্ষা ইন্দ্রয়িগণ শ্রেষ্ঠ,ইন্দ্রয়িগণ অপেক্ষা মন শ্রেষ্ঠ, মন অপেক্ষা বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ,যিনি সেই বুদ্ধি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তিনিই আত্না।
ইন্দিয়,মন ও বুদ্ধির উপর যে আত্না তাহার সম্বন্ধে গীতা বলিয়াছে--
"ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচি--
ন্নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরানো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।"
অর্থঃ এর জন্ম নাই, মৃত্যু নাই, ইনি পুনঃ পুনঃ উৎপন্ন বা বর্দ্ধিত হন না; ইনি-শূন্য,হৃসবৃদ্ধি-শূণ্য, ক্ষয়বিহীন ও পরিণাম-শূন্য,শরীর বিনষ্ট হইলেও ইনি বিনষ্ট হন না।