হযরত আকদাস কুতুবুল আকতাব
হাজী হাফেজ ওয়ারেস আলি শাহ
যুগে যুগে পথ ভ্রষ্ট মানবকে পথের দিশারী দিতে যে-সব মহাপুরুষের আগমন ঘটেছিল তার মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সাধক রূপে, ঋষি রূপে আসিলেন দয়ার প্রস্রবণ
হযরত আকদাস কুতুবুল আকতাব হাজী হাফেজ ওয়ারেস আলি শাহ।
তিনি পশ্চিম অঞ্চলের বড়বাঁকি জেলার অন্তর্গত দেওয়াশরীফে ১৮১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ইহলোক ত্যাগ করেন।
তিনি মাদারজাত আলী ছিলেন। সেই জন্য তিনি বিবাহ করেন নাই। তিনি এহরামপোষ ব্যবহার করিতেন,পায়ে কখনো জুতা দেন নাই। মাথায় কখনো বালিশ দেন নাই। শীঁত তাহাকে কষ্ট দিতে পারে নাই, কারন তিনি সর্বদা আল্লাহর চিন্তায় বিভোর থাকিতেন।
আর তার দেহ হয়তে এক নূরানী জ্যোতি বিচ্ছুরিত হইত। যে দেখি তো সেই মজিত। নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম, খ্রিস্টান সবাই তার শিষ্য ছিল।
তিনি ছিলেন সে যুগের তুলনাহীন আশেক। তার শিক্ষার মূল নীতি ছিল 'মহব্বত।' তিনি মধ্যে মধ্যে রাসুলের মহব্বতে এতই বিচলিত হইয়া পড়িতেন যে, তিনি পাগল-প্রায় হইয়া পদব্রজে মক্কা শরিফ জেয়ারত করিতেন। তিনি তাহার জীবনে একাদশবার হজ্বব্রত পালন করেন।
হাজী ওয়ারেস আলি সাহেবের উপদেশাবলী
১। মহব্বত করো,
২। কারো সামনে হাত বাড়াবে না,
৩। কখনো নিজের অভাব জ্ঞাপন করিবে না,
৪। কখনো ছাওয়াল করিবে না, ছাওয়াল না করিয়া যাহা মিলে তাহার উপর সবর থাকিবে।
৫। সদা আল্লাহ্ আল্লাহ্ করিতে থাক,
৬। আশেকের একটি নিশ্বাস ও খালি যায় না,
৭। বা-অজু দরূদ শরীফ পড়,
৮। আশেকের পক্ষে মাশুকের খেয়াল ব্যতীত অন্য বস্তুুুর খেয়ালের অবসর নাই,
৯। মহব্বত তাহাকে বলে যদ্বারা এনছান দুনিয়া ও আখেরাতের উভয়ই ভুলিয়া যায়।
১০। মহব্বতে এনছান অন্ধ হইয়া যায়,
১১। মহব্বত সাদেক হইলে বিচ্ছেদে ও আয়েন মিলনস্বরূপ হয়,
১২। মহব্বত সাচ্চা হলে খোদা মিলে,
১৩। যে ব্যাক্তি খোদার উপর ভরসা করে, খোদা তাহাকে মদদ দেন,
১৪। মোওয়াদেদ তিনি যাঁহার দেল হইতে আল্লাহ ব্যতীত সকল খেয়াল দূর হইয়াছে,
১৫। ইশক খোদার এক খাস রাজ, ইশকই আমার মঞ্জিল। যে জাঁ-নশীনি দাবি করে সে বাতিল। চামার হউক, আর মেতর হউক যে আমাকে মহব্বত করে, সেই আমার,
১৬। যে ব্যক্তি বা-ওযু থাকে, সে কেয়ামতের দিন পরেজগারদের কাতারে খাড়া হইবে। তাহার অজুর স্থানগুলি (নখ,মুখ,হাত,পা) কেয়ামতের দিন নূরানী হইবে,
১৭। তরিকতের সাথে শরীয়ত আদায় বিশেষ ফলপ্রদ,
১৮। আখেরি রাত্রিতে সালাত ইশক অর্থ্যৎ তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করো,
১৯। জেছমানি এবাদতের সাথেই রুহানি রেয়াজাদ অতি উত্তম,
২০। রোজা রুহের গেজা ( খোরাক), স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া রোজা রাখা আশেক দিগকের সুন্নত, রোজা রাখলে খোদার মহব্বত বৃদ্ধি পায়,
২১। রাগ হইলে সবর করিবে, আর রাহাত হইলে শোকর করিবে,
২২। দুনিয়াবী মায়া অনের্থের মূল,
২৩। শরীয়তের লক্ষ্য রাখিয়া হকীকতের উপর আমল কর,
২৪। জাহের ও বাহেন এককর, তবেই তোমার উপর রহমত হইবে,
২৫। চিত্ত শুদ্ধ কর, তাছাউফের আমল কর। খোদায়ী মহব্বত হাসেল কর। অনেক জাহেরী ছূফী, কিন্তু বাতেনী বোতপোরস্ত। মোনাফেকী ত্যাগ কর,
২৬। যদি লোককে ভাল নজরে দেখ তবে দেলের মলিনতা দূর হইবে,
২৭। নিজের নেকী প্রকাশ করিবে না,অপরের ত্রুটির প্রতি নজর করিবে না,
২৮। কাহাকেও মন্দ জানিবে না, আশেক সেই ব্যাক্তি যে মাশুকের প্রত্যেক বস্তু ভাল চোখে দেখে,
২৯। খোদাকে তখনই মিলে যখন "আমি ও তুমি"-র পার্থক্য চলিয়া যায়,
৩০। আশেক তাহাকে বলে, যাহার কিছু নাই,
৩১। হিংসাতে লোকসান ব্যতীত ফায়দা নাই। হিংসুক হামেশা জলিল থাকে,
৩২। কাহারও হক নষ্ট করিলে গোনাহ হয়, তওবা করিলেও তাহা মাফ হয় না,
৩৩। নফসের বিরুদ্ধাচারণ এবাদতের মধ্যে গণ্য। নফছের সাথে মিত্রতা পতনের কারণ,